করোনাভাইরাসে বয়স্করা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে কেন?

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১:২৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারিতে বয়স্কদের মৃত্যু এবং মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকির বিষয়টি এখন বেশ পরিষ্কার। তবে ৯ বছরের কম বয়সী শিশুদের এই ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যাও কম। এই শিশুদের কখনও হালকা অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে করোনায় সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশই পায় না। এমনকি করোনায় সংক্রমিত হয়ে এই শিশুদের মৃত্যুর রেকর্ডও নেই।

তবে ৮০ বছরের বেশি বয়সী যারা আগে থেকেই রোগে আক্রান্ত, তারা এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের বয়সীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ১৫ শতাংশ।

৫০ এর নিচের যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের মৃত্যুর হার মাত্র ০ দশমিক ২ থেকে ০ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ৫০ ঊর্ধ্বদের মৃত্যুর হার একটু বেশি। ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের প্রাণহানির হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর এই হার ৩ দশমিক ৬ এবং ৭০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। অন্যদিকে করোনায় ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই মারা যাচ্ছেন।

এছাড়া যারা আগে থেকে গুরুতর রোগে ভুগছেন তাদের তুলনায় হালকা অসুস্থ মানুষের মৃত্যুর হারে বেশ পার্থক্য রয়েছে। যারা হৃদরোগে ভুগছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। ডায়াবেটিস রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৩, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বিশেষ করে অ্যাজমা এবং দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভোগা মানুষের মৃত্যুর হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ৬ এবং ক্যান্সার রোগীদের মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

বয়স্করা কেন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে?
মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। ইতালির পর এই মুহূর্তে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। তাদের কোনও না কোনও স্থায়ী ব্যাধি রয়েছে। তবে স্থায়ী ব্যাধির উপস্থিতি বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর উচ্চ হারকে আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে যেকোনও ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্করা। শরীরে কোনও ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে তা অধিকাংশ সময় ক্ষতি করে। বয়স্কদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তার সঙ্গে লড়াই করে উঠতে পারে না রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এসময় শরীরে এক ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়; যা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল উৎপাদন করে।

অতিরিক্ত লড়াই চালাতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিকল হয়ে যায়। যে কারণে তা বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা তৈরি করে।

 

দূরারোগ্য ব্যাধির ক্ষেত্রে যা ঘটে
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন হৃদযন্ত্রের রোগে আক্রান্তরা। এখন পর্যন্ত করোনায় তাদের মৃত্যুর হার সাড়ে ১০ শতাংশ। তবে সংক্রমণ হলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি হবে বিষয়টি তেমন নয়। কিন্তু হার্টের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস গুরুতর অসুস্থতা ডেকে আনতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

ডায়াবেটিসের মতো যারা অন্যান্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ডায়াবেটিস। যে কারণে কোনও ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সেটির সঙ্গে লড়াই চালাতে পারেন না ডায়াবেটিস আক্রান্তরা। ফুসফুসের সমস্যা কিংবা অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা তৈরি করে করোনাভাইরাস।

ঝুঁকি কমাবেন কীভাবে?
আপনি যদি ওপরের ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপগুলোর মধ্যে পড়েন অথবা তাদের ঘনিষ্ট সংস্পর্শে এসে থাকেন তাহলে সবসময় নিচের স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলুন।

>> কোনও ভবনে প্রবেশ অথবা ভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর হাত পরিষ্কার করুন

>> কোনও কিছু কেনাকাটা করলে নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করুন।

>> নিরিবিলি সময়ে বাইরে ঘোরাফেরা করুন এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলুন।

>> গণপরিবহনে চলাচলের সময় স্টাফদের এবং ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দরজা খোলার অনুরোধ করুন।

>> বারবার স্পর্শ করতে শরীরের এমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বারবার ধুয়ে ফেলুন।

>> করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনার জন্য অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ অথবা গণপরিবহন ব্যবহার সীমিত করুন।

>> পরিবারের কোনও সদস্য অথবা বন্ধ অসুস্থ হলে তাকে আপনার কাছে আসতে নিষেধ করুন।

>> তবে আপনি যদি তরুণ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকেন এবং করোনাভাইরাসের ঝুঁকির ব্যাপারে কোনও ধরেনের শঙ্কা না থাকে, তাহলে যারা ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক আছেন তাদের মাঝে এই ভাইরাস না ছড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুন। যতটুকু সম্ভব তাদেরকে এড়িয়ে চলুন।

সরকার কী করতে পারে?
বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকার বয়স্কদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ব্রিটিশ সরকার সত্তোরোর্ধ্ব বয়স্কদের আগামী চার মাস যেকোনও ধরনের সামাজিক সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বয়স্কদেরকে সেলফ আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বৃদ্ধ নিবাসে অপ্রয়োজনীয় পরিদর্শনে না যেতে দেশটির নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনের সরকার। বৃদ্ধ নিবাসে গেলেও বয়স্কদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বয়স্কদের অন্তত ১৫ দিনের জন্য বাড়িতে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অস্ট্রেলিয়াতেও বয়স্ক আবাসন এলাকায় ভ্রমণ সীমিত করতে অন্যান্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

আপনার মতামত দিন :