করোনা থেকে সুস্থ হওয়া সেই ঢামেক নার্স সেবা দেবেন আক্রান্তদের

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৭:০৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২০

‘আমাদের জন্যই আমাদের সুস্থ থাকতে হবে। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা। অমি সবাইকে বলবো, সরকার চাচ্ছে করোনাভাইরাস দেশে ছড়িয়ে যাতে না পড়ে। আপনার সরকারের নির্দেশনা মেনে চলুন। বেশি দিন না, অল্পকিছু দিন ঘরে থাকুন। কারণ, আমি অসুস্থ হয়েছি। আমি এরকম ভয়াবহ একটা সময় পার করে এসেছি, এটা কতটা কষ্টের যার হবে সে ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। আমার বয়স মাত্র ত্রিশ পার হলো। তারপরও আমাকে চরম শ্বাসকষ্ট সহ নানান সমস্যায় ভূগতে হয়েছে। একটু অক্সিজেনের জন্য, একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য যে কতটা কষ্ট হতে পারে তা আমিই বুঝেছি । এরকম অবস্থা কাউকে বুঝানো সম্ভব না।’

করোনাভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনাক্ষী রাণী শুক্রবার (৩ এপ্রিল) মেডিভয়েসের সাথে কথা বলেন। তখন তিনি দেশের মানুষকে উদ্দেশ্যে করে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চাকে রেখে অনেক দিন হাসপাতালে ছিলাম। তাদের ওপর দিয়েও চরম পরিস্থিতি গেছে। তাছাড়া আমি যে একা অসুস্থ হয়েছি, সেটা তো না। যদি এরকম হতো আমি সুস্থ হয়ে যাবো। তাহলেও তো  কোন চিন্তা ছিলো না। কিন্তু আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্ছা, আমার হাজব্যান্ড, বাসার কাজের দুইজন লোককেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছি। এসব ভেবে শারীরিক অসুস্থার সাথে চরমভাবে মানসিকভাবেও অশান্তিতে ছিলাম।

রাণী বলেন, কী ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা। বুকের ওপর যেন কয়েক মন ওজনের বড় পাথর। বেঁচে থাকার জন্য শুধুই প্রয়োজন অক্সিজেন। দুই বছর ও ছয় বছরের দুই সন্তানের জন্য আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। বড় বাবুটা ভিডিও কলে ফোন দিয়ে প্রতিদিন কান্না করতো। সে বলতো, মামনি তুমি কখন আসবা? তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না। কিন্তু আমি আমার বাচ্চাদের কিছুই বলতে পারছিলাম না আমি কখন আসবো! কেননা আমার তো প্রতিটাক্ষণ পার হচ্ছে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। এমনকি আমার জানা ছিল না এর শেষ কোথায়!

তিনি বলেন, ভীষণ যন্ত্রণায় শুধু চোখের কোণে পানি বেয়ে পড়তো। তাদের কান্না, আকুতি আর প্রচণ্ড যন্ত্রণায় নিজের চারপাশ ধূসর মনে হতো। এখনও পরিবাররের সদস্যদের জন্য খুব ভয় হয়। তারা কোয়ারেন্টিনে। রাতের বেলায় শিশুরা কাশি দিলে ঘুম ভেঙে যায়। ভয় পাই চিকিৎসক হাজব্যান্ডকে নিয়ে। আমি আর চাই না দেশের একটি মানুষও এই মহামারী  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোক। এমনকি আমার চরম শত্রুও যেন আক্রান্ত না হয় ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসে।

আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিয়ে রাণী বলেন, যেহেতু আমি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ইর্মাজেন্সি বিভাগে ডিউটি করি। সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসে। আসলে সেবাই তো আমাদের ব্রত। ঘরে বসে থাকা আমাদের মানায় না। তাই ছুটেছি এক রোগী থেকে অন্য রোগীর কাছে। কখন যে কার কাছ থেকে ভাইরাস আমার শরীরে সংক্রমণ করেছে, তা আমার জানা নেই।

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা নার্স স্বপ্ন দেখেন দেশের স্বাস্থ্যখাত আরো সমৃদ্ধ হবে। সেবা পাবে সব করোনা আক্রান্ত রোগী।  আর নিশ্চিত হবে সবার জন্য উন্নত সেবা।

জীবনের জন্যই জীবন, মানুষের জন্যই মানুষ

তিনি আরো বলেন, আমি আরো আন্তরিকতার সাথে সেবা দিয়ে অসহায় এসব রোগীদের পাশে থাকতে চাই। আর কেউ করোনার মতো ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হোক। আমার শারীরক অবস্থা আরো ভালো হলে, আবার ফিরে যাবো হাসপাতালে। সেবা দেবো করোনায় আক্রান্ত রোগীদের। যে ব্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছি, আমি তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। জীবনের জন্যই জীবন, মানুষের জন্যই মানুষ। আমি হয়তো খুব বেশি কিছু করতে পারবো না, অন্তত ৫ জন বা ১০ জন রোগীকেও যদি সেবা দিতে পারি, সেটাই হবে আমার সব থেকে বড় পাওয়া।

আপনার মতামত দিন :