কি অদ্ভূত- চাউল হল মসজিদের মোয়াজ্জিনের বেতন!

Selim Selim

Reja Sobuj

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ৫, ২০২০

কি অদ্ভূ!!
আমরা আধুনিক সভ্য সমাজের ইসলামের কোন স্তরের মানুষ? আমাদের মধ্যে ইসলামের মূল্যবোধ কতটুকু আছে? কতটুকু পালন করি-আমল করি? আমাদের কি কিয়ামতের মহামাঠ মহাময়দানে হিসাবের জন্য সম্মুখীন হতে হবে না? তাহলে কিভাবে সম্ভব মসজিদের মোয়াজ্জিনের বেতন হিসেবে আমরা চাউল দেই? এটা কি তবে মোয়াজ্জিন হওয়ার জন্য তার শাস্তি? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান হল আল্লাহর ঘর মসজিদ। আর এই মসজিদের সবকিছু দেখাশোনার যে দায়িত্ব তার প্রায় পুরোটাই মোয়াজ্জিনের উপর ন্যাস্ত থাকে। আর এই জন্যই কি মোয়াজ্জিনকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাউল তুলে তাকে বেতন নিতে হয়? খুব দুঃখ জনক ! ভাবতে অবাক লাগে! ঘটনাটি সংক্ষেপে বলি,
ঈদুল ফিতর ২০২০, ঈদের একদিন পরে সকাল ৭.৩০ এর দিকে একজন বাড়ির গেটে এসে কড়া নাড়ল, বেশ উচ্চস্বরে ডেকে উঠল মুষ্টির চাল দেন। আমি বাইরে গিয়ে দেখলাম আমাদের মসজিদের মোয়াজ্জিন সাহেব। তাকে জিজ্ঞাস করলাম আপনি চাউল উঠান কেন? তিনি জবাবে বললেন এটাই তার মাসিক বেতন। মসজিদ থেকে কোন বেতন দেয়া হয় কিনা আমি জানতে চাইলে তিনি বললেন, এভাবেই চাল তুলে তার বেতন দেয়া হয়। শুধুমাত্র রমজান মাসে ৪০০০ টাকা দেয়া হয়। তাছাড়া অন্য কোনো টাকা দেয়া হয় না। এই কথা গুলা শোনার পরে মনে খুব আঘাত লাগল। তখন আল্লাহর রাসূলের অত্যন্ত প্রিয় একজন সাহাবী ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিন হযরত বেলাল (রা:) হুজুরের কথা মনে পড়ে গেলো। হযরত বেলাল (রা:) হুজুর আযান না দিলে ঐ আযান আল্লাহর আরশে পৌছাত না। আর সেই আজান দেয়ার দায়িত্ব পালনকারী মানুষদেরকে আজ আমরা এভাবে মুল্যয়ন করি । দিনে পাঁচবার তিনি আমাদেরকে এক আল্লাহ্‌র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মসজিদে নামাজের জন্য আহ্বান করেন । আর আমরা এইভাবে তার সম্মান দেই? পরে বিষয়টি নিয়ে মসজিদের সম্মানিত সভাপতির সাথে আলোচনা করে মসজিদ কমিটির সবার সাথে বিষয়টি নিয়ে মিটিং করে সবাই একমত হয় যে দ্রুত এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে এবং মোয়াজ্জিন এর যথাযথ সম্মান বজায় রাখতে সবাই প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হই। পরবর্তীতে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অন্যান্য মসজিদের মানুষের সাথে কথা বলি এবং ঐ একই চিত্র দেখতে পাই। তারাও চাউল দিয়ে মোয়াজ্জিনের বেতন পরিশোধ করে। আমি জানি না আর কতশত মসজিদে এই নিয়ম চালু আছে। তবে এতটুকু জানতে পারলাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই নিয়ম চালু রয়েছে ।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার বাবার নামে যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছি – আলহাজ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন – বিষয়টি ফাউন্ডেশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যেই সকল মসজিদে এইভাবে চাউল দিয়ে মোয়াজ্জিনের বেতন পরিশোধ করা হয় ঐ সকল মসজিদের সম্মানিত কমিটির সাথে আলোচনা করে মোয়াজ্জিন সাহেবের এই অবমাননাকর পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বের হয়ে এসে তাকে যথাযথ সম্মান দেয়া যায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা।আলহাজ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই কার্যক্রম সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপি পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ। এইজন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য। অনুগ্রহপূর্বক আমাদেরকে তথ্য দিলে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব বলে আশা রাখি ইনশাআল্লাহ ।
পরিশেষে আমার আকুল আবেদন মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনগন সম্মানিত ব্যাক্তি। তাদের প্রতি নূন্যতম সম্মান টুকু যেনো আমরা প্রদশর্ন করি। সবার কাছে দোয়ার জন্য দরখাস্ত।

মো. আ. মতিন ভূঁইয়া
সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ,
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী, ঢাকা ।

আপনার মতামত দিন :