১৬ কোটি জনতার জন্য নমুনা সংগ্রহকারী মাত্র ৪০০ জন !!!

Shahadat Shahadat

Hossain

প্রকাশিত: ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২০

 

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ বা নোবেল করোনা ভাইরাস বিশ্ব জুড়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে আরো আগেই। এর প্রভাবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপি স্থবির হয়ে পড়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক, পারিপার্শ্বিক সহ অন্যান্য ব্যবস্থপনা। এরই অংশ বিশেষ বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে সর্ব প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয় ৮ই মার্চ। আর ইতিপূর্বে এই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চার শতাধিক কোটায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে কেন্দ্র হিসেবে প্রথমে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (IEDCR) প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করা হতো। পরবর্তীতে তা পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধি করে বর্তমানে ১৭ টি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করে কারা বা নমুনা সংগ্রহ করে কে ? যারা সংগ্রহ করছেন তাদের সংখ্যা কত ? আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় সংগ্রহকারী পর্যাপ্ত আছে কিনা ? এমন প্রশ্ন সাংবাদিক মহল থেকে জনমনে ও ঘুরপাক খাচ্ছে।

হুম এসবের উত্তর বিশ্লেষণ করতে গেলে ব্যাপকভাবে করা বাঞ্চনীয়। কিন্তু সংক্ষিপ্তভাবে প্রশ্ন গুলোর উত্তর হচ্ছে, রোগীর কাছ থেকে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) বা ল্যাব টেকনোলজিষ্টগণ। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটির ও অধিক। আর এই ষোল কোটির ও অধিক জনসংখ্যার বিপরীতে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট তথা নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে মাত্র ৪০০ জন। যা নিত্যন্ত অপ্রতুল। IEDCR এ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রয়েছেন ১০-১২ জন মাত্র। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, বিএসএমএমইউ সহ নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এর সংখ্যা খুবই কম।
যার প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে। কিছু দিন পূর্বে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠান টতে এখনো শুরু করা যাচ্ছে না করোনা ভাইরাস টেষ্ট।

দেশে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) সংখ্যা ৩-৪ হাজারের বেশি হবে না। অনেকেই চাকুরী থেকে অবসরে চলে গেছে কিন্তু তার স্থলে নিয়োগ ও দেয়া হয় নি। এমন চিত্র দেশের অনেক জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO) পরীক্ষার উপরেই জোর বেশি দিচ্ছে। কারণ পরীক্ষা যত বেশি হবে রোগীর সংখ্যা নির্ণয়, রোগের বিস্তার, করনীয় নির্ধারণ সহ আনুষঙ্গিক বিষয় গুলোর উপর সম্পর্কে তত বেশি স্পষ্ট ধারণ সৃষ্টি হবে।

বর্তমান কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জনবল বাড়ানোর বিকল্প কিছুই নেই। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি বা নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন তখনই সার্থক ও সফল হবে যখন এগুলির সঠিক পরিচালনা হবে। আর এই এসব কিছু পরিচালনার জন্য চাই দক্ষ জনবল।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের ভূমিকা অপরিসীম। সর্বপ্রথম রোগীর অতি নিকটে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা সহ পরীক্ষা নিরীক্ষার ও বেশির ভাগ কাজই মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রাই করে থাকে। তাদের একটি ভুল রিপোর্ট যেমন একটা সমাজে করোনা ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট ঠিক তেমনি তাদের একটি সঠিক রিপোর্ট ও বাঁচাতে পারে একটি সমাজ কে একটি দেশ কে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) একজন চিকিৎসক বিপরীতে থাকবে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ৩ জন নার্স। আনুপাতিক হারে সেটা হবে ১ঃ৩ঃ৫। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট দের ক্ষেত্রে সেটা একদমই কম। রোগ নির্ণয়ের মত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে মেডিকেল টেকনোলজিষ্টরা। তাদের রিপোর্ট উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন চিকিৎসকবৃন্দ। তাই বর্তমান পরিস্থিতি মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট বিনীত নিবেদন করোনা ভাইরাসের মত এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের সংখ্যা বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশ ও জাতী উপকৃত হবে।

লেখক
মোঃ শাহাদাত হোসেন
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদ
নোয়াখালী জেলা শাখা।

আপনার মতামত দিন :