ঢেলে সাজানো হোক স্বাস্থ্যশিক্ষা বোর্ড

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৮:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস :

ডিপ্লোমা লেবেলের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাক্রম বর্তমান বিশ্বের একটি পেশাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা। দেশে মধ্যম মানের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ডিপ্লোমা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নেই। বর্তমানে ডিপ্লোমা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রযুক্তি শিক্ষাটি আমাদের দেশে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, দ্য স্টেট মেডিকেল ফ্যাকালটি অব বাংলাদেশ (প্যারামেডিক কোর্সের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান), বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মেডিকেল, ডেন্টাল কাউন্সিলসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে প্রায় ৩০টি শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়, যার ফলে সব কার্যক্রম সঠিকভাবে তাদের পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রযুক্তি বিষয়ে মধ্যম মানের জনবল তৈরির প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার ফলে শিক্ষার মানসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এছাড়া দেশে বহুদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে। আর এ নিয়ে অনেক সমস্যাও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি বহু বছর ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদেও নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়ছে। এ কারণে মেডিকেল টেকনোলজি থেকে পাস করা লক্ষাধিক টেকনোলজিস্ট বেকারত্বে জীবনযাপন করছে। তাই বর্তমান সরকার এ বিষয়টি চিন্তা করে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর নামে নতুন একটি অধিদফতর তৈরি করেছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতর দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে গঠিত নতুন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর স্বাস্থ্য শিক্ষা সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক, প্রশাসনিক, উন্নয়ন ও গবেষণার বিষয়গুলো দেখভাল করবে। এখন থেকে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ম্যাটস ও হেলথ টেকনোলজিসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠান সার্বিক বিষয়ে নতুন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর দেখভাল করবে। ফলে এতদিন ধরে আইএইচটি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত সব হেলথ টেকনোলজি কোর্সর পরিচালনা করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। এই অধিদফতরের উদ্দেশ্য সব স্বাস্থ্য শিক্ষাকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ নভেম্বর ২০১৯ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর’ গঠন করে আদেশ জারি করা হয়। ৩০/১২/২০১৯ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর নামে নতুন প্রবর্তিত এই অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার এ এইচ এম এনায়েত হোসেনকে। এছাড়া আরো দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আরো কিছু পদে রদবদল করা হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, নবগঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। নতুন বা পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা শিক্ষার্থী ভর্তি করা, শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান করার ক্ষমতা রাখে না। তাই এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য বাংলাদেশে ডিপ্লোমা পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রযুক্তি দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের আওতায় একই ছাতার নিচে বাংলাদেশ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন। উক্ত শিক্ষা বোর্ডে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, ডিপ্লোমা ইন লাইফ সায়েন্স কারিকুলাম চারটি পরিচালিত হবে।

ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি কারিকুলামে যেসব বিভাগগুলো থাকেব তা হলো ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (এলোপ্যাথ/ হোমিওপ্যাথ/ আয়ুর্বেদিক/ইউনানি/ আকুপাংচার (ইন্ট্রিগ্রেটেড মেডিসিন)/ ডেন্টাল/অপটোমেট্রি (চক্ষুবিজ্ঞান)/ আয়ুস)। উল্লেখিত বিভাগগুলোর প্রথমে ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন ও সার্জারি বসবে এবং প্রথম বন্ধনীর মধ্যে বিভাগ বসবে অর্থাৎ ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (হোমিওপ্যাথ)। এসব কোর্সগুলো সরকারি-বেসরকারি ম্যাটস, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ইউনানি কলেজ, আয়ুর্বেদিক কলেজ, ডেন্টাল ইনস্টিটিউটে পরিচালিত হবে।

ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি কারিকুলামে যেসব বিভাগগুলো থাকেব তা হলো (কার্ডিয়াক কেয়ার টেকনোলজি, রেডিওথেরাপি টেকনোলজি, মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, ল্যাবরেটরি মেডিসিন (প্যাথলজি) টেকনোলজি, বায়ো মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, হিসটো টেকনিশিয়ান, ফিলেবেটোমি টেকনোলজি, রেডিয়েশন থেরাপি টেকনোলজি, এক্সরে (রেডিওগ্রাফি) টেকনোলজি, ডেন্টাল টেকনোলজি, ইমারজেন্সি মেডিকেল টেকনোলজি, এনেসথেশিয়া টেকনোলজি, অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি, ডায়ালাইসিস টেকনোলজি, ব্লাড ব্যাংক টেকনোলজি, মেন্টাল হেলথ টেকনোলজি, ভিশন টেকনোলজি, হোম হেলথ এইড টেকনোলজি, ডায়েট টেকনিশিয়ান, মেডিকেল রেকর্ড অ্যান্ড হেলথ ইনফরমেশন টেকনোলজি, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট টেকনোলজি, জেরিয়েট্রিক এইড টেকনোলজি, পেশেন্ট রিলেশন, স্পিস অ্যান্ড অডিওথেরাপি টেকনোলজি, স্যানিটারি সুপারভাইজার ইন্সপেক্টর, ফিজিওথেরাপি টেকনোলজি, ফ্রন্টলাইন হেলথ ওয়ার্কার, ডায়াবেটিকস এডুকেয়ার টেকনোলজি, যোগা, স্কিন কেয়ার টেকনোলজি)। উল্লেখিত বিভাগগুলোর প্রথমে ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি এবং প্রথম বন্ধনীর মধ্যে বিভাগ বসবে অর্থাৎ ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি (যোগা)। এসব কোর্সগুলো সরকারি-বেসরকারি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পরিচালিত হবে।

ডিপ্লোমা ইন লাইফ সায়েন্স কারিকুলামে যেসব বিভাগগুলো থাকবে তা হলো (ফার্মাসিটিক্যাল, বায়ো ফার্মাসিটিকাল, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)। এসব কোর্সগুলো সরকারি-বেসরকারি ফার্মেসি ইনস্টিটিউটে পরিচালিত হবে। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কারিকুলামে যেসব বিভাগ থাকবে তা হলো (নার্সিং, মিডওয়াইফারি, কেয়ারগিভিং টেকনোলজি)। এসব কোর্স সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে পরিচালিত হবে। উল্লেখিত চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, ডিপ্লোমা ইন লাইফ সায়েন্স কারিকুলাম চারটি নিয়ে যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা যায় তবে মানসম্পন্ন দক্ষ মধ্যম মানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা সম্ভব।

লেখক : ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ও কলামিস্ট
ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
পটুয়াখালী
[email protected]

আপনার মতামত দিন :