একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর আর্তনাদ Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ৫:১৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২০ আমি হাবিব (রুপক অর্থে) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এল.এল.বি ড্রিগ্রি পাশ করা গ্যাজুয়েট!! ড্রিগ্রিটা হাতে পাওয়ার পিছনে আছে এক নিধারুন কষ্টের গল্প,মধ্যবিত্ত বাবার বড় ছেলে আমি।বাবার ইচ্ছায় ল’তে ভর্তি হওয়া।নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বাবার সামর্থ্য অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সংকল্প করেছিলাম!! প্রথম কয়েক সেমিস্টারে বাবার জমানো টাকায় টেনেটুনে পার করতে পারলেও সামনে আগানো সম্ভব হয়ে উঠছিলো না, বাবার মাথায় রাজ্যের হতাশা!! মায়ের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বাকিটা টেনেটুনে আজ আমি ল’ গ্যাজুয়েট। ভাবছিলাম এই বুজি বাবার একটা কুল হলো, এখন থেকে বুজি বাবার সংসারে আমার কিছু কন্টিভিউট করা সামার্থ্য হলো। হায়!! বিধিবাম,আমি যে এখনো আইনজীবী হতে পারি নাই আমার নামের সাথে যে শিক্ষানবিশ শব্দ জড়িত। বার কাউন্সিলের বেড়াজালে সনদের পরীক্ষাটা পাওয়া হলো না আরও ৩বছর নামের সাথে শিক্ষানবিশের ট্যাগ মোচন হবে কিনা জানা নেই।মাস ছয়েক এদিক-সেদিক চাকরি খোজ করে বাধ্যে হয়ে ইউনিভার্সিটির এক বড় ভাই সিনিয়র আইনজীবীর চেম্বারে শিক্ষানবিশ হিসাবে জয়েন করলাম। সেখানের বর্ণ বৈষম্যে আমাকে পড়তে হবে লাল ট্রাই কারন আমি যে শিক্ষানবিশ! কোর্টের স্টাফ থেকে শুরু করে মক্কেল সবাই আড় চোখে তাকানো দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি মনে হয়। কি করা গ্রামে থাকা ‘মা’ পাড়ার চাচীদের গল্প শুনিয়েছে আমার ছেলের পড়া শেষ সে এখন ঢাকা কোর্টে কাজ শুরু করেছে ও এখন আইনজীবী। ‘মা’ তো জানে না তার ছেলে শিক্ষানবিশ শব্দের বেড়াজালে বিদ্ধঃস্ত। গত ২০দিন হলো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খালি পেঠে লোকাল বাসের হ্যান্ডেল ভর করে সকাল ৯টায় চেম্বারে যাচ্ছি,সারাদিন পরিশ্রম শেষে সিনিয়রের দেওয়া ২০০-৩০০ টাকা প্যান্টের পকেটে যত্ন করে বাসায় ফিরে স্বপ্ন বুনছি একদিন আমি অনেক বড় হবো পকেটে ২শত টাকা না হয়ে বিশ হাজার টাকার ব্যান্ডেল নিয়ে বাসায় ফিরবো। আজ লকডাউনের একমাসের বেশি সময় পার হলো কোর্ট বন্ধ থাকায় বাসায় বসে দিন যাচ্ছে,দুই মাসের ভাড়া বকেয়া,বাড়িওয়ালা সকাল বিকাল এসে দুই-চারটা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।কি করা আমিও তা শুনে হজম করে অবস্তু। গ্রামের বাড়িতে মধ্যবিত্ত বাবা-মাও সরকারের ত্রাণ পায় না তার ছেলে যে বড় কোর্টের আইনজীবী তাদের কি কোন কিছুর অভাব আছে!!!! আজ খবরে আসলো লকডাউনের সময়সীমা সরকার আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে,নেওয়ার হইতো যুক্তিক কারনও আছে!! সরকার নিম্ব শ্রেনীর জন্য আর্থিক প্রনোদনার প্যাকেজ ঘোষণা দিচ্ছে,আমাদের মত শিক্ষানবিশের কথা সরকারের না ভাবলেও চলে। কারন আমরা যে শিক্ষানবিশ আইনজীবী!! তাইতো ঝুম বৃষ্টিতে বারান্দার কোনায় আপন মনে কবিতা এসে যায়… “মেঘের নিচে দাড়াই যখন বৃষ্টি ভেজার চলে আমার কষ্ট সকল ধুয়ে যায় শ্রাবণ বৃষ্টির জলে চোখের কোণে থাকে জমে গোপন অভিমান” আপনার মতামত দিন : SHARES আইন-আদালত বিষয়: