বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে রিট এবং আদালতের আদেশ Selim Selim Reja Sobuj প্রকাশিত: ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২৪ কখনো একটা শুনানিতে কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয় না। রিট মামলার ক্ষেত্রে প্রসিডিওর হচ্ছে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে হলফনামা আকারে রিট পিটিশন দায়ের করবেন। প্রথমে পিটিশনার এই রিট পিটিশনের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা তা আদালতে উপস্থাপন করবেন। কোর্ট যদি পিটিশনার বা তার আইনজীবীর বক্তব্য শুনে মনে করে এই রিট মামলা প্রাথমিকভাবে যৌক্তিকতা আছে, তাহলে আদালাত রুল (rule nisi) ইস্যু করবে। রুলের অর্থ হচ্ছে বিবাদীর প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার মতো। অর্থাৎ রিটকারী আদালতের কাছে যেই অর্ডার চাচ্ছে তার পক্ষে সেই অর্ডার কেন দেওয়া হবে না এই বিষয়ে তোমার পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করো। এক্ষেত্রে কোনো এক্সিকিউটিভ একশন চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হলে আদালত সেই একশনের কার্যকারিতা স্থগিত করতে পারে। কার্যকারিতা স্থগিত করার অর্থ ওই আদেশ পুরোপুরি বাতিল করা না, সাময়িক স্থগিত করা। https://youtu.be/faWF-DALfjw যেমনঃ কোনো ব্যক্তিকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সে মনে করেছে তাকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন সে কোর্টে রিট করলে কোর্ট প্রাইমা ফেইসি কোনো গ্রাউন্ড যৌক্তিক মনে করলে সরকারের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করতে পারে এবং ওই বরখাস্তের আদেশ সাময়িক স্থগিত করতে পারে। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আর্গুমেন্টের পরে আদালত সিদ্ধান্ত নিবে যে আসলেই ওই রুল এবসোলিউট করবে অথবা ডিসমিস করবে। এবসেলিউট করার অর্থ হচ্ছে, বিবাদীর বক্তব্য শোনার পরেও কোর্টের মনে হচ্ছে বাদীর বক্তব্যই সঠিক। আর রুল ডিসমিস করার অর্থ হচ্ছে বিবাদীর বক্তব্য শোনার পরে মনে হয়েছে বাদীর মামলা আসলে গ্রহণযোগ্য নয়। https://youtu.be/faWF-DALfjw বুয়েটের রিটের ক্ষেত্রে কেবল রুল হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রুল এবসোলিউট বা ডিসমিস হয়নি। যেহেতু বুয়েট প্রশাসনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন এর কার্যকারিতা স্থগিত করেছে, তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই প্রজ্ঞাপন অকার্যকর থাকবে এটা ঠিক। এই মামলায় পিটিশনার একজন ছাত্রলীগ নেতা। বিবাদী সরকার এবং বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বুয়েটের ভিসি হাইকোর্টের আদেশের পরে বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার দিক থেকে তিনি সঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু এইখানে মামলার মূল বিবাদী হিসেবে তার কাজ হচ্ছে কনটেস্ট করা। তিনি যদি বুয়েটের ছাত্রদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকেন, এবং তাদের পূর্ববর্তী প্রজ্ঞাপন যৌক্তিক মনে করে থাকেন, তাহলে তার করণীয় হচ্ছে অতিদ্রুত আপিল বিভাগে গিয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ এর আবেদন করা। আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে তাহলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন আবার কার্যকর হবে। আপিল বিভাগে প্রতিদিন এরকম হাইকোর্ট বিভাগের অনেক অর্ডার স্টে হয়ে যায়। সম্প্রতি রমজানে স্কুল বন্ধ রাখার হাইকোর্ট এর অর্ডার দুইদিনের মাথায় আপিল বিভাগ স্টে করে দিয়েছে। আপিল বিভাগ যদি স্টে না করে, হাইকোর্টে যদি রিটকারী রাব্বি জিতেও যায়, তারপরেও আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে হাইকোর্ট এর রায় চ্যালেঞ্জ করা যাবে। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধেও আবার আপিল বিভাগেই রিভিউ করা যায়। দু’পক্ষেরই লম্বা সময় ধরে আইনি লড়াই করার সুযোগ আছে। খুলনা ইউনিভার্সিটি, বিইউপির মতো কিছু পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ছাত্ররাজনীতি নাই। বুয়েটের ছাত্রদের পক্ষে এটি একটি শক্তিশালী আর্গুমেন্ট। রাজনীতি করার অধিকার মৌলিক অধিকার কিন্তু ক্যাম্পাসে বা হলের মধ্যে রাজনীতি করার অধিকার মৌলিক অধিকার এমন কথা কোথাও নাই। বুয়েটের কেউ রাজনীতি করতে চাইলে ক্যাম্পাসের বাইরে গুলিস্তানে বা পল্টনে এসে রাজনীতি করবে। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিলে কারো রাজনীতি করার অধিকার খর্ব হচ্ছে না। এটা আরেকটা শক্তিশালী আর্গুমেন্ট। কিন্তু বুয়েটের ভিসি আপিল বিভাগে যাওয়ার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে জানা নাই। আবার হাইকোর্ট বিভাগের রুলও যে তিনি ডেডিকেটেডলি কনটেস্ট করবেন এমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। ছাত্রলীগ নেতার পক্ষে তার নিযুক্ত আইনজীবী আছেন। বুয়েটের পক্ষে থাকবেন সরকারি আইনজীবী অর্থাৎ অ্যাটর্নি জেনারেল এর অফিস। বুয়েট কর্তৃপক্ষ চাইলে নিজেরা কোনো প্রথিতযশা আইনজীবীও নিযুক্ত করতে পারেন। কিন্তু বুয়েটের ভিসি তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। এ থেকে সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে যে, বুয়েটের ভিসি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। তিনিও চান যাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি ফিরে আসে। রিট মামলা করার পরে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি একটা ওকালতনামার মতো কাগজে সাইন করছেন এমন একটা ছবি ফেসবুকে এসেছে। ছবিটাতে খেয়াল করে দেখলাম এপিলেট ডিভিশন লেখা। তার মামলা ছিল হাইকোর্ট ডিভিশনে। তাহলে এপিলেট ডিভিশনের ওকালতনামায় সে কি শুধু পোজ দেওয়ার জন্য সাইন করার অভিনয় করেছে? এটা হতে পারে। আরও একটা বিষয় হতে পারে। হাইকোর্টের অর্ডারের পরে আইনজীবীর পরামর্শে সে এপিলেট ডিভিশনে ক্যাভিয়েট দিয়ে রেখেছে। এভাবে ক্যাভিয়েট দিয়ে রাখলে অপরপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে তাকেও ইনফর্ম করা হবে। হয়ত রাব্বির দিক থেকে সতর্কতা ছিল যে বুয়েট কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্টে চাইতে পারে। কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা এই মামলা কনটেস্ট করতেই ইচ্ছুক না। Habibur Rahman, Lawyer, Ex: DU, Law. আপনার মতামত দিন : SHARES আইন-আদালত বিষয়: