কোভিড-১৯ পরীক্ষায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর ভূমিকা Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২০ আইইডিসিআর ভাইরোরজি, জুনোসিস, মাইক্রো বায়োলজি, প্যারাসাইটোলজি, মেডিকেল এন্টামোলজি বিভাগ সহ বিভন্ন বিভাগে চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার , প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার , সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, সায়েন্টফিক অফিসার, মেডিকেল অফিসার, ৫ জন সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ১৫-১৬ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ( প্রজেক্ট সহ) গন দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানে বিএসএল ২ ল্যাব রয়েছে বেশ কয়েকটি। আইইডিসিআর যে কোন রোগের পাদুর্ভাব, রোগের আউট ব্রেক, ইমার্জেনিক, রি ইমার্জেনিক, রোগের মহামারি দেখা গেলে তা সনাক্তকরন, বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছেন সফল ভাবে। তাছাড়া আইইডিসিআর একটি গবেষণা ইন্সটিটিউট। এখানকার কর্মরত ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন দেশে যুদ্ধকালিন সময়ের মতন সপ্তাহের প্রায় সকল দিন একটানা ২৪ ঘন্টা ডিউটি করে আসছেন। প্রতি দলে ১ জন সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট / মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ডাক্তারদের সমুন্নয়ে টিম করে পাসপেক্টটিভ রোগিদের তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন। সবচেয়ে বেশি ক্লোজ কন্টাকে থেকে জীবনের সবচেয়ে বেশি ঝুকি নিয়ে সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট / মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন নমুনা ( ব্লাড, থ্রোট সওয়াব ও নেজাল সওয়াব) সংগ্রহ করছেন। দেশের এক প্রান্থ থেকে আর এক প্রাণ্থে ছুটে চলতে হচ্ছে আমাদের টেকনোলজিস্টদের। দেখা যাচ্ছে এক উপজেলার বিদেশ ফেরত সাসপেক্টেড কেস গুলি কয়েকটি গ্রামে, তাহলে প্রতিটি রোগির অবস্থান আলাদা আলাদা গ্রামে হওয়ায় রোগির কাছে গিয়ে নমুনা ও কেস হিস্ট্রি সংগ্রহ করতে প্রতি বার পিপিই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আবার হাসপাতালে ভর্তি অনেক সাসপেক্টেড কেস থেকে অনেক গুলি নমুনা সংগ্রহ করতে দীর্ঘ সময় পিপিই পরে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় পিপিই রিমোভ করতে দেখা আর নতুন রোগি ভর্তি হলো তখন পিপিই না খুলে নতুন রোগীর জন্য অপেক্ষা থাকতে হয়। যদিও দীর্ঘ সময় পিপিই পড়ে থাকাও কষ্টকর ও ঝুঁকি পুর্ন। পজিটিভ বা কনফার্ম কেস গুলি থেকে রোগির প্রগ্রেসিভ রিপোর্টের জন্য বারবার নমুনা সংগ্রহ করতে হয় জীবনের সবচেয়ে বেশি ঝুকি নিয়ে। আর এ কাজটি আমাকেই করতে হয়েছে বেশি। গতকাল শনিবার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে দুপুরে থেকে রাত পর্যন্ত ৪ জন কনফার্ম পজিটিভ ও সাসপেক্টেড ১১ টি সহ মোট ১৫ টি স্যাম্পল ও কেইস হিস্ট্রি সংগ্রহ করে অফিসে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় এবং রাত ১১-৩০ এ আবার অফিসে যেতে হয় একই কারনে। ঢাকা মহানগরীতে বাসায় বাসায় গিয়ে নমুনা ও তথ্য সংগ্রহে করে অফিসে এসে প্রোসেস শেষে বাসায় ফিরতে প্রায়ই রাত ১/৩ টা বেজে যায়। পরের দিন আবার সকালে ৭/৯ টা থেকে সারা দিন কাজ করতে হচ্ছে পুর্বের ধারাবাহিকতায়। রাজধানী ঢাকার বাহিরেও প্রতি সপ্তাহে আমাদের সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিক্যাল টেকনোজিস্টদের যেতে হয়। কখনো কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা অতি রিমোট এরিয়ায় দুর্গোম পথ পাড়ি দিয়ে নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ করছি। (গত সপ্তাহেই আমাকে চাদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা শরনখোলা ও বাগেরহাট) সুতরাং বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারন করা প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে ও ব্যাপক বিস্তার রোধে জীবনের সবচেয়ে কঠিন ঝুকি নিয়ে রোগির সবচেয়ে বেশি ক্লোজ কন্টাকে থেকে কাজ করছেন ডাক্তার ও টেকনোলজিস্ট গন। বিশেষ করে সিনিযর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টগনকে নমুনা সংগ্রহ করতে ও তা পরীক্ষা করতে রোগির বা নমুনার সবচেয়ে বেশি ক্লোজ কন্টাকে থাকতে হয়। আমাদের দেশে কবেট ১৯ বিস্তার রোধে আইইডিসিআর পরিচালক মহোদয় প্রোফেসর ডাঃ মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা ম্যাডামের নির্দেশনায় যে সফলতা এসেছে তা সম্ভব হয়েছে আইইডিসিআর এর কর্মরত ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আন্তরিক চেষ্টার ফলে। আগামিতে আইইডিসিআর এর ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন অতীতের অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কবিট ১৯ সহ যে কোন মহামারি রোধে আন্তরিকতার সহিত সফলভাবে কাজ করবে। এর আগে ডেঙ্গু, নিপাহ, চিকনগুনিয়া বিস্তার রোধে আইইডিসিআর এর ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট চেষ্টা ও প্রয়াস সফল হয়েছিল। সুতরাং করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন ফ্রন্ট ফাইটার হিসাবে জীবনের কঠিন ঝুবি নিয়ে কাজ করে আসছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া কোন ভাবেই নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা সম্ভব নয়, তাই করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে ও বিস্তার রোধে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ভুমিকা অপরিসীম এটা বাস্তব সত্য। কিন্তু দুঃখজনক এই যে এই বাস্তব সত্যটি কোন মিডিয়া গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন না। এমন কি প্রতি দিন প্রেস কনফারেন্স একবারের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের এই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা স্বীকার ও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন ফ্রন্ট ফাইটার ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেও তা আড়াল করে প্রকাশ হচ্ছে “ডাক্তার ও নার্সগন করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে কাজ করে আসছে”। এমন কি কয়েকদিন আগে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় তার এক বক্তব্যে বলেন ” আমাদের ডাক্তার ও নার্সগন করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে ও তার বিস্তার রোধে তারা কাজ করছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলা তারা প্রস্তুত।” প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ পেশায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকেন। ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সকলেই স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় দায়িত্বশীল। অজ্ঞাত কারনে কোন মিডিয়াতে কখনো মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নাম বা তাদের গুরুত্বপুর্ন অবদান স্বীকার বা প্রকাশ করা হয় না। যা বাস্তব সত্যের সাথে প্রহসন বলে মনে হয়। তাই স্বাস্থ্য বিষয়ে সকল প্রেস কনফারেন্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গুরত্বপূর্ণ অবদান ও ত্যাগ স্বীকার উল্লেখ করে সকল মিডিয়াতে প্রচার ও প্রকাশ করা প্রয়োজন বলে আমরা সকল সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন মনে করি। এতে তাদের অবদান ও ত্যাগ স্বীকার উৎসাহিত হবে। স্বাস্থ্য সোবার মান আরো এগিয়ে যাবে। (কালেক্টেডঃ Mohammad Ali Jinnah, Sinior Medical Technologist IEDCR. Covid -19 এ স্যাম্পল কালেক্ট এন্ড টেস্ট এ কর্মরত) আপনার মতামত দিন : SHARES মতামত বিষয়: