যাদের ঘরে থাকতে বলছেন, তাদের ঘর আছে তো? Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২০ আমরা হয়তো ভুলে গেছি, ঘরে থাকতে চাইলেও ঘরে থাকার জায়গা নেই অনেক মানুষের। ছোট একটা ঘরে দশ বারোজন মানুষ কোন রকমে গাদাগাদি করে থাকেন, সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় গতর খেটে কিছু টাকা রোজগার করেন আর রাতের বেলা খাটের ওপরে, ফ্লোরে এমন কি খাটের নিচেও ঘুমান। এমন ঘরের সংখ্যাও কয়েক লাখ অন্তত এই ঢাকা শহরে। কারো কারো খাট বা চকিও নেই। তাদেরকে ন্যাকা ন্যাকা গলায় যতোই বলুন ‘ঘরে থাকুন’ ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয় তাদের জন্য। একটু হাটতে গেলেও এর ওর গায়ে পা লেগে যায় এতো ছোট ঘর। সারাক্ষণ কী করবে ওরা শুয়ে থাকবে? নাকি দেশ সমাজ রাজনীতি নিয়ে উচ্চ মার্গের আলোচনা করবে? খাবারের ক্রাইসিসের কথা নাইবা বললাম। এমনিতেই গরীব মানুষ ভাত বেশি খায় নাস্তা খায় না বলে। এতোগুলো চাল ডাল যোগারের চিন্তা আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় যদি সংসারে খিটমিট লেগে যায় তার সমাধান কী? আলো বাতাসের চমৎকার ব্যবস্থাও থাকে না তাদের ঘরে। টিমটিমে বাতির আলো আর গুমোট গরমে সাত আটজন মানুষ যখন দিনের পর দিন একই ঘরে বন্দী তখন সেটা কি একটা ছোট খাটো দোজখ হয়ে যাবার কথা না? ঘরে থাকুন ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন বুলি গুলো দেয়ার সময় আমাদের চোখে ভেসে ওঠে চমৎকার বারান্দা ওয়ালা সুন্দর একটা এপার্টমেন্ট যেখানে বাবা ছেলের সাথে খেলছে পরিবারের সাথে চমৎকার সময় কাটাচ্ছে। স্ত্রী মাঝে মাঝে এটা সেটা রান্না করে এনে খাওয়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে সময় কাটছে ইন্টারনেটে সার্ফিং করে। কি চমৎকার একটা সুখী সুখী দৃশ্য। করোনার আতঙ্ক এখানে বাড়তি একটা ঝামেলা তবে জীবন যাপনের বাঁধা নয়। বিভিন্ন স্বাদের খাবারের উপলক্ষগুলো ভালোই আনন্দ দেয়। তাই মাঝে মধ্যে অনলাইনে এসে আমরা জ্ঞান কপচিয়ে যাই। নিজের দৃষ্টি থেকে লোকজনকে নিরাপত্তার সবক দিয়ে যাই। ক্ষুধার্ত বাচ্চার ক্রমশ ঘ্যানঘ্যানানি আর কান্না থামাতে অক্ষম বাবা সন্তানকে উপুর্যপুরি চড় থাপড়ের কুৎসিত দৃশ্য আমরা ভাবতে পারি না; ক্রমশ ঘামতে ঘামতে বিরক্ত হয়ে থাকা পুরুষটির নোংরা গাকিগালাজ আর অসহায় নারীটিও সহ্য করতে না পেরে যখন চিৎকার চেচামেচি করে ছোট্ট সেই ঘরটিতে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দেয় সেই অস্বাস্থ্যকর দৃশ্য আমাদের কল্পনাতেও আসে না। সেই অসহায়ত্ব আমাদের স্পর্শ করে না। ফট করে বলে দেই এই লক ডাউন আরও তিন মাস বাড়িয়ে দেয়া হোক। কিন্তু এই তিন মাসে ঐ গরীব মানুষগুলোর জন্য কোন ভালো সমাধান আমরা ভাবি না। ওরা বিরক্ত হয়ে এমনি ‘ঘোরাঘুরি’ করতে বের হলে ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে ঘরে ফিরিয়ে দিয়ে বাহবা নেই। কিন্তু তাদের বড় একটা পরিসর দেয়ার কথা ভাবতে পারি না। এই জরুরী মূহুর্তে স্কুল কমিউনিটি সেন্টারের ভবনগুলোতে এই দরিদ্র মানুষগুলোর থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ছিন্নমূল মানুষদেরকেও এমন লঙরখানার ব্যবস্থা করে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকারের একাই সব টাকা দিতে হবে এমনও নয় জেলা প্রশাসক ইউ এন ও দের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতাও নেয়া যেতে পারে। এতে মানুষগুলোর একটা গতি হবে। হুট হাট বড় বড় বক্তব্য দিতে আমাদের তেমন খাটতে হয় না। করোনা যুদ্ধের এ অচলাবস্থায় তৈরী হওয়া হাজারো সমস্যার প্রতিটির আলাদা আলাদা সমাধান কিভাবে হবে তা নিয়ে সবাই আমরা শঙ্কিত সন্দেহ নেই৷ তবু যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করে ধীরে ধীরে ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনার চেষ্টা করা দরকার। দয়া করে অযথা নিজের বুদ্ধি ফলাতে গিয়ে কাউকে গালি দিবেন না। পারলে সমাধান বাতলে দিন। নষ্ট কথায় কষ্ট বাড়ান কেন? ডা. আহমাদ হাবিবুর রহিম লেখক, কলামিস্ট বিসিএস (স্বাস্থ্য), রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ। আপনার মতামত দিন : SHARES মতামত বিষয়: