খোল চিঠি : রোগ নির্ণয়ে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কাজের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২০

খোলা চিঠি:

হে বিশ্বনেত্রী জনদরদী মানবতার মা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি মহান আল্লাহ্ তা’আলার অশেষ কৃপায় সুস্থ আছেন। শুরুতেই বলবো পত্র লিখনে ভুল ত্রুটি হলে দয়া করে মার্জনা করবেন। একরকম বাধ্য হয়েই আপনার নিকট খোলা চিঠি লেখার সাহস করলাম।

প্রিয় নেত্রী,

স্বাধীনতা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ (স্বামেপ) কেন্দ্রীয় সংসদ এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই মুজিব শতবর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে আমারা দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী এক ভয়াবহ জীবন যাপন করছি। এমতাবস্থায় আপনার সমীপে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কিছু কথা তুলে ধরতে চাই।

*সুচিকিৎসার পূর্বশর্ত সঠিক রোগ নির্ণয়, এই কাজটি যারা প্রত্যক্ষভাবে যারা করেন, তারাই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ)।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগ নির্ণয়ের কাজটি মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ প্রত্যক্ষভাবে করে থাকেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ নমুনা সংগ্রহ করে, ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করে রোগ সনাক্ত করে রিপোর্ট তৈরি করেন, সম্মানিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তাতে সাক্ষর করেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসকগণ (যারা সরাসরি রোগী দেখেন) চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেন এবং নার্স (সেবক-সেবিকা) গণ সেই মোতাবেক সেবা প্রদান করেন। এখানে পর্দার অন্তরালে রোগ নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ) গণ তাদের পেশাগত কাজের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত।

মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ শুধুমাত্র ডায়াগনোষ্টিক ল্যাবরেটরিতে নয়, এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এম আর আই টেষ্ট সহ, ক্যান্সারের রোগীদেরকে রেডিওথেরাপি দেয়া, বার্ধক্যজনিত ও আর্থাইটিস এর রোগীদেরকে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকেন এবং ডেন্টাল টেকনোলজিস্টগণ ডেন্টাল ল্যাবে দাঁতের বিভিন্ন মডেল তৈরি সহ ডেন্টাল সার্জন (চিকিৎসক) দের পাশাপাশি রোগীদেরকে দন্তসেবাও দিয়ে থাকেন।

হে বঙ্গবন্ধু কন্যা,

১৯৬৩ সাল থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ) গণ রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রযুক্তিতে অবদান রেখে আসছেন। ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশে (গ্যাজেটে) ‘মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও অন্যান্য ডিপ্লোমা পেশাজীবীদের নিয়ে আজও মেলেনি ১০ম গ্রেড। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন বিবৃতিতে ‘টেকনিশিয়ান’ সম্বোধন করা হয় এবং বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও সেবাদানকারী হিসেবে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা উল্লেখ করে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। রোগ নির্ণয় তথা চিকিৎসা সেবায় দীর্ঘ ৫৭ বছর পেরিয়েও মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ তাদের পেশাগত কাজের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নতুন পদ সৃষ্টির কাজেরও কোনো অগ্রগতি নেই।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০০৮ সালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল, যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ২০১১ সালে। তারপর ২০১৩ সালে উক্ত পদে আর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, যেটি একটি মামলা জনিত কারণে প্রায় ১০ বছর যাবৎ স্থগিত হয়ে আছে, যদিও ঐ নিয়োগ বাস্তবায়নে এখন আর কোনো আইনগত বাধা নেই। অপরদিকে বাংলাদেশের একমাত্র সায়ত্বশাষিত ও প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ তে ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট’ পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগের নিমিত্তে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯এ। ঐ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ২০১০এ। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ মূল প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে অস্থায়ীভাবে স্বল্প সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়, যা বর্তমান কর্মপরিধির তুলনায় খুবই সামান্য। এখানে অস্থায়ী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ একদিকে যেমন চাকরি জনিত অনিশ্চয়তায় ভুগছে এবং অস্বচ্ছল জীবন যাপন করছে , ঠিক তেমনি অন্যদিকে হাজার হাজার বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মানবেতর জীবনযাপন করছে।

*বেকার:

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) = ১৫ হাজার (প্রায়),

অন্যান্য (রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি, রেডিওথেরাপি) বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট= ১৫ হাজার (প্রায়)।

মোট বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট =৩০ হাজার (প্রায়)।

[পুরুষ বেকার ৫০%, নারী বেকার ৫০%]

*বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম (১ চিকিৎসক : ৩ নার্স : মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৫) অনুযায়ী ১জন চিকিৎসক নিয়োগ দিলে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে নিয়োগ দিতে হয়।

*বাংলাদেশে ডাক্তার আছে ৭০ হাজার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ সর্বসাকুল্যে মাত্র ৯ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার পদ শূন্য অবস্থায় আছে।

*বাংলাদেশে সারে তিন লক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকা দরকার। গত ১০ বছর যাবৎ নিয়োগ বন্ধ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিভাবক সূলভ আচরণ করছে না। অথচ আমরা প্রস্তুত আছি করোনা যুদ্ধে অংশ নিতে।

পরিশেষে আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

সভাপতি/ মহাসচিব এর পক্ষে
এম এম শিবলুর রহমান (মহসীন শিবলু)

সাংগঠনিক সম্পাদক

স্বাধীনতা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ (স্বামেপ) কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন :