এই দুঃসময়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে-সমাজকর্মী মোঃ মাজহারুল ইসলাম

Arup Arup

Sarker

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২০

একটি দেশের উন্নয়ন যেমন একক কোন মানদন্ডের উপর নির্ভর করে বলা যায় না, তেমনি কোন বিশেষ জনগোষ্ঠির সার্বিক কল্যাণ বাদ দিয়ে একটি দেশকে নৈতিক আদর্শীক দেশ বলা যায় না। অনেক দিন ধরে রাষ্টীয়ভাবে এই বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠি হিজড়াদের উপর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কার্যকরী কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রুপ নেয়নি। পথে ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় যখন এই জনগোষ্ঠি দুবেলা দু’মুঠো ভাত, বাসা ভাড়া এবং জীবন চলার জন্য আমাদের কাছে হাত বাড়িয়ে দেয় তখন আমরা অনেকেই ওদের প্রতি করে বসি নেতিবাচক মন্তব্য। ‘‘ওরাও কোন না কোন মায়ের গর্ভের সন্তান।

এই দুঃসময়ে আজ ওরা খুবই অসহায় হয়ে পরেছে’’ এসো সচেতন হই সোসাইটি (এসই) কর্তৃক ২৩ মে শনিবার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠিদের (তৃতীয় লিঙ্গ) ঈদ সামগ্রী কিনার জন্য প্রত্যেককে কিছু করে নগদ অর্থ প্রদান কালে কথাটি বলেন সমাজকর্মী ও লেখক মোঃ মাজহারুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠি হিজড়াদেরকে অবহেলা না বরং ওদেরকে ভালোবেসে বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখিয়ে ওদেরকে এই সমাজের বোঝা নয়, মানবসম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব। করোনা পরিস্থিতিতে আজকে অনেকেই অসহায় হয়ে পড়েছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ছে। তারমধ্যে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠি হিজড়ারা আজ খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু ওদের মাসিক খরচ ঠিকই দিতে হচ্ছে। এসো সচেতন হই সোসাইটি (এসই) করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সাথে সাথে গরিব অসহায় মানুষদের বাসস্থান পরিদর্শন করে সমস্যা চিহ্নিত করে সহায্য প্রদান, টোকাই এবং ছিন্নমূল মানুষদেরকে মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।

এসই হিজড়াদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ সম্বন্ধে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সংঘটন বিচ্ছিন্নভাবে ওদেরকে নিয়ে কিছু কাজ করলেও ওদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকরী তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না। সমাজকর্মী মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, ওদের প্রতি প্রথমত আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আমাদের মনে এটা ধারণ করতে হবে, ওদেরকে আমরা ওদের কিছু বদ্ধমূলক ধারণা থেকে বাহির করে আনবো। ওদেরকে কর্মমূখি শিক্ষা দিয়ে স্বাবলম্বী করতে হবে। সমাজের প্রচলিত ধ্যান ধারণার সাথে ওদেরকে পরিচিত করতে হবে। বর্হিঃবিশ্বের হিজড়াদের জীবনমান সম্বন্ধে জানাতে হবে। সচেতনতামূলক সামাজিক আন্দোলন ‘এসো সচেতন হই সোসাইটি (এসই) বেশ কয়েকটি কর্মসূচির মধ্যে বৈচিত্র্যময় এই হিজড়া জনগোষ্ঠির কল্যাণে সমাজের মানুষের কাছে তাদের মানবিক অধিকার বিষয়ে সচেতনতা করার লক্ষ্যে ‘একই মায়ের গর্ভের কষ্টের সন্তান (হিজড়া) এরাও আমাদের সন্তান’ কর্মসূচিটি পরিচালনা করে আসছে। এসই বেশ কয়েক জায়গার হিজড়াদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, মান্ডা মুগদা, ধামরাই, নারায়নগঞ্জ সিদ্দেশ্বরী, মৌচাক। ঐসব জায়গা দুই শতাধিক হিজড়া রয়েছে।

এসই করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে পর্যায়ক্রমে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে মোট ৩৪ জন হিজড়াকে ঈদ সামগ্রী কিনার জন্য প্রত্যেককে কিছু করে নগদ অর্থ প্রদান করেছে। এসই এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি মনে করেন, কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করার অর্থ ওদেরকে সত্যিকারে সাহায্য নয়। এসই থেকে তিনি ওদেরকে বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এসই হিজড়াদেরকে নিয়ে তখনই সফল হবে যেদিন হিজড়ারা তাদের নিজের কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। তিনি ওদেরকে দিয়ে ঘরেই কিছু তৈরি করার চেষ্ঠা করছেন। তিনি মনে করেন, বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠি হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে এই দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের উপর ন্যস্ত না করে বিভিন্ন ধরনের বেসরকারী সংস্থা, বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক আন্দোলন, বড় কোন প্রতিষ্ঠান মানবিক কার্যাবলীর অংশ হিসেবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে।

মাজহারুল ইসলাম তাঁর প্রতিষ্ঠিত সচেতনতামূলক আন্দোলন এসই এর কর্মসূচির মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠি সম্বন্ধে মানুষের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব, নৈতিকমূল্যবোধ, ছোট্টশিশু থেকে শুরু করে সববয়সী মানুষের মধ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠী প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী আনয়নে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অন্যদিকে হিজড়া জনগোষ্ঠিদের মধ্যেও সমাজিক কোন নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শিক দিক থেকে কমতি থাকলে তা বাহির করে সেই সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, আমরা সবাই মানুষ। আজকে কোন এক পরিবারে হিজড়া সন্তান জন্মগ্রহণে আপনি আমি নেতিকবাচক মন্তব্য করছি, কিন্তু এটাও তো হতে পারে, কাল আপনার আমার পরিবারে হিজড়া সন্তানের জন্ম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অন্যান্যদের মত ওরাও আজ খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে ওদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।ওরাও এই রাষ্ট্রেরই জনগণ। আপনার বা আমার সন্তান।

মোঃ মাজহারুল ইসলাম, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী

আপনার মতামত দিন :